সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

কৃষিক্ষেত্রে আসছে পরিবেশবান্ধব ট্রাক্টর

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৮৫ বার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

কৃষিক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার তেমন বাড়ছে না৷তবে কিছু কিছু দেশ এই খাতটিতে নতুন নতুন উদ্ভাবনে হাত দিলেও তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।

সম্প্রতি জার্মানির একটি কোম্পানি পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক ট্রাক্টর তৈরি করে সেই ঘাটতি পূরণ করতে চাইছে৷ এক চাষী সেই প্রণালী কাজে লাগিয়ে সুবিধাও পাচ্ছেন বলে জানা গেছে৷

ডিজেল ট্রাক্টরের বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়া অনেকেরই পরিচিত৷ তার পাশেই ইলেকট্রিক ট্রাক্টর থাকলে পার্থক্য সহজেই চোখে পড়ে৷ কারণ, সেটি থেকে একেবারেই কোনো ধোঁয়া বের হয় না৷

বাভেরিয়া রাজ্যের ইয়োহানা ও টাডেউস বাইয়ার সেই ট্রাক্টর ডিজাইন করেছেন৷ কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপ্লব আনতে এটাই তাদের অবদান৷

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬০ হর্সপাওয়ারের টাডুস নামের প্রোটোটাইপ মিউনিখের উপকণ্ঠে এক অরগ্যানিক খামারে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ একবার চার্জ দিলে এই ট্রাক্টর পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা কাজে লাগানো যেতে পারে৷ মূল আইডিয়া অবশ্য একেবারে নতুন নয়৷

টাডেউস বলেন, আমার পরিবার চাষবাস করে এসেছে৷ কম বয়সে ও পরেও আমি সেই কাজে অনেক সাহায্য করেছি৷ সেখানে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে দেখেছি৷ মনে হয়েছে, গ্রিডে চালান দেওয়ার বদলে সেই বিদ্যুৎ সেখানেই ব্যবহার করা অনেক শ্রেয়৷

ডিজেল-চালিত ট্রাক্টরের তুলনায় বিদ্যুৎচালিত ট্রাক্টরের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে৷

তবে সেটির ডেভেলপরদের মতে, সেই বিনিয়োগের দ্রুত সুফল পাওয়া যায়৷ টাডেউস বাইয়ার বলেন, ট্রাক্টর যতদিন চালু থাকে, সে সময়কালে মূল ব্যয়ের উৎস জ্বালানি৷ এ ক্ষেত্রে নিজস্ব উদ্যোগে উৎপাদিত বিদ্যুতের কল্যাণে জ্বালানির ব্যয় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম৷ ফলে দুই থেকে তিন হাজার ঘণ্টা কাজে লাগানোর পরেই বাড়তি ব্যয় উঠে আসে৷

ফ্রানৎস ওবারআইসেনবুখনার বিদ্যুতচালিত ট্রাক্টরটিকে প্রথমবার বাস্তব পরিবেশে পরীক্ষা করছেন৷ তার খামারের ছাদের সৌর প্যানেল তার বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটাতে পারে৷

খামারের মালিক ফ্রানৎস ওবারআইসেনবুখনার বলেন, জ্বালানির ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়াকে আমি গুরুত্ব দেই। কারণ, সেটা আমাকে আরো আর্থিক নিরাপত্তা দেয়৷ এর অর্থ, গ্রিডে বাজার-মূল্য ওঠানামা করলেও আমার তেমন কিছু এসে যায় না৷

ইলেকট্রিক ট্রাক্টর তাকে সম্ভবত আরও স্বাবলম্বী করে তুলবে৷ ডিজেলের উচ্চ মূল্যের কারণে তাকে বিচলিত হতে হবে না৷ব্যাটারিচালিত টাডুস ট্রাক্টরের আরেকটি সুবিধা রয়েছে৷

ফ্রানৎস বলেন, ইলেকট্রিক মোটরের রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ, ক্ষয়ও কম হয়৷ তাছাড়া দুর্গন্ধ বা কালো ধোঁয়াও বার হয়না৷ আমাকে বায়ু দূষণ রোধে কিছু করতে হয়না, কারণ এগুলো নির্মল৷

একটা অসুবিধা অবশ্য রয়েছে৷ মাঠে লাঙল চালানো বা কঠিন কোনো কাজের জন্য ব্যাটারি যথেষ্ট শক্তি দিতে পারে না৷

টাডুস কোম্পানির টাডেউস বাইয়ার মনে করিয়ে দেন, ৫০০ হর্সপাওয়ারের ট্রাক্টর একটানা উচ্চ মাত্রায় চালু থাকে৷ তাই ব্যাটারি এর বিকল্প হতে পারেনা৷ কমপক্ষে অদূর ভবিষ্যতে ও বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে সেটা সম্ভব নয়৷ তাই এ ক্ষেত্রে ফুয়েল সেল বা ডিজেল জেনারেটর সমাধানসূত্র হতে পারে৷

ইয়োহানা বাইয়ার নতুন ট্রাক্টরের বিপণনের বিষয়টি দেখাশোনা করেন৷ প্রথমদিকে ক্রেতা পেতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল৷ কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে জার্মান সরকারের ডিজেল ভরতুকির মেয়াদ শেষ হতে চলায় আরও বেশি চাষি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করছেন৷

ইয়োহানা বলেন, সূচনাপর্বের পর মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে, নতুন প্রশ্নও শুনতে পাচ্ছি৷ নতুন প্রযুক্তি ও সেটির নানা সুবিধার প্রশংসা আমরা স্পষ্ট বাড়তে দেখছি৷ বিশেষ করে আর্থিক সাশ্রয় আকর্ষণীয় হচ্ছে৷

প্রথম সারির যান প্রস্তুতকারকরাও বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রের যন্ত্রপাতিগুলোকে বিদ্যুৎচালিত করে তোলার উদ্যোগে শামিল হচ্ছেন৷ চাষি হিসেবে ফ্রানৎস ওবারআইসেনবুখনার আরও এক ধাপ এগোনোর কথা ভাবছেন৷

তিনি নিজের সৌর উৎপাদন প্রণালীর সম্পূরক হিসেবে টাডুস ব্যাটারি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন৷ দিনের একটা বড় সময় জুড়ে ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয় না৷ তাই তার বাসা ও খামারের ভবনগুলোতে ট্রাক্টর অব্যবহৃত বিদ্যুৎ পাঠাতে পারে৷


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর