সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০২ অপরাহ্ন

চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৭৪ বার
প্রকাশ: রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:২২ অপরাহ্ন

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তারা প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত অতি নিম্নমানের থেরাপি যন্ত্রপাতি কম দামে কিনে উচ্চ মূল্যে বিল পরিশোধ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানকে সরঞ্জামগুলো সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেওয়ার সঙ্গে চক্রটি জড়িত। ভুক্তভোগীরা নিম্নমানের সামগ্রী পেয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদনও করেছেন।

এছাড়া এই চক্র ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র’ প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ। সংস্থার এক কর্মচারী সরকারি চাকরির পাশাপাশি এনজিও পরিচালনা করছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে সংস্থাটির সদ্য বিদায়ি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুহুল আমীন খান যুগান্তরকে বলেন, নিম্নমানের চিকিৎসা ও সেবাসামগ্রী ক্রয়ের অভিযোগ সত্য। কারণ দরপত্রে যে মানের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি চাওয়া হয়, কারিগরি কমিটি যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সুপারিশ করে তা গ্রহণ না করার কোনো সুযোগ থাকে না। পদ্ধতি পরিবর্তন না হলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নেই।

প্রকল্প বা আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন আইন-২০২৩ অনুসারে কর্মরত সব জনবলকে ফাউন্ডেশনে যোগদান করতে বলা হয়েছে। তবে কারা রাজস্ব খাতে যাবে আর কারা যাবে না তা ঠিক করবে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন কেউ সংস্থাটিতে যোগদান না করলে সে আইন অনুসারে চাকরি থেকে বাদ পড়বে।

প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে রুহুল আমীন খান বলেন, এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি কাউকে চাকরি দিতে পারি না, অথচ আমার পিওন অনেকের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে। মানুষ ওদের বিশ্বাসও করে।

উপ-পরিচালক ড. মো. রেজাউল কবির যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করছি। ভালো-মন্দ সবকিছুর দায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর। প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে আত্তীকরণে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে জানান তিনি। সরকারি চাকরি করে এনজিও পরিচালনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্নে ড. রেজাউল বলেন, অন্য দশজনের সঙ্গে আমিও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালনায় আছি। এতে সরকারি চাকরির সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

জানতে চাইলে সরকারি চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, সরকারি চাকরি করে এনজিওর পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই। এটা আচরণবিধিমালায় পরিষ্কার বলা আছে।

সংস্থাটির অপর উপ-পরিচালক এসএম জাহিদুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাই সব জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হোক। সে কারণে প্রকল্পের সব কর্মচারীকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে যোগদান করতে বলেছি। এখানে টাকা-পয়সার কোনো বিষয় ছিল না। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কতদিন সংস্থাটিতে কর্মরত আছেন এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে এসএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের প্রশ্নে তিনি বিব্রতবোধ করছেন। শিক্ষা ক্যাডারের ২২তম বিবিএসের এই কর্মকর্তা ২০১৮ সালের ৩০ জুন থেকে সংস্থাটিতে কর্মরত। তিনি সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হিসাবে সংস্থাটিতে আছেন দাপটের সঙ্গে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য চিকিৎসা সহায়ক উপকরণ কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে। অতি নিম্নমানের চিকিৎসাসামগ্রী পেয়েও সাধারণ দরিদ্র প্রতিবন্ধীরা প্রতিবাদ না করায় দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। টাঙ্গাইলের প্রতিবন্ধী রুহুল আমীন সিরাজী নিম্নমানের হুইল চেয়ার পেয়ে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করেন। তিনি ইতঃপূর্বেও অভিযোগ করেছিলেন কিন্তু টাঙ্গাইলের সাবেক এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিরাজী যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে ড. রেজাউল কবির ও এসএম জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র সক্রিয়। তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন করেন। সিরাজী আরও বলেন, আমি চাই গরিব প্রতিবন্ধীরা যেন এদের মাধ্যমে আর কোনো ভাবে প্রতারিত না হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খায়রুল আলম শেখ এবং সংস্থাটির এমডি মো. রুহুল আমীন খানকে ওএসডি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাউন্ডেশনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রমোশন অব সার্ভিসেস অ্যান্ড অপারচ্যুনিটিজ টু দ্য ডিজঅ্যাবল পারসন্স ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ৩০ জুন। প্রকল্পের আওতায় মাঠপর্যায়ে ৫০টি অফিস আছে। এসব অফিসে কর্মরত স্টাফ, গার্ড, ড্রাইভার, হেলপারসহ অন্যান্য পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হয় আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যেমে। ওই প্রকল্পের কর্মচারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে অর্থাৎ নবগঠিত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে আত্তীকরণে সক্রিয় একটি চক্র। চক্রটি সংস্থার মূল কাঠামোতে চাকরি আত্তীকরণের প্রলোভন দেখিয়ে কর্মচারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফাউন্ডেশনের আওতায় দেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জনবলও সংস্থাটির মূল কাঠামোতে যোগ দিতে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্থাটির কিছু নন-ক্যাডার কর্মচারী নিম্নমানের থেরাপি মেশিন, হুইল চেয়ারসহ যাবতীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের সব অপকর্ম জায়েজ করেন। দরপত্র কমিটির বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) অভিযোগ করে। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) করা অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং সংস্থটি রি-টেন্ডারে বাধ্য হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এক উপপরিচালক নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যেমে নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামত করার নামে লাখ লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নিয়েছে। ওই উপ-পরিচালক টেন্ডারে মালামাল ক্রয়ের জন্য তিনি নিজেই দর ও পরিমাণ ঠিক করে থাকেন। এছাড়া যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় সে প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দরপত্র তৈরি করা হয়। ওই উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের ওই সভাপতির স্ত্রীর নামের প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার যন্ত্রপাতি সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির ওই ডিডি ডিজঅ্যাবল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন ফাউন্ডেশন একটি এনজিও পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ ভ্রমণও করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর...
কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Bangla Webs