• সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
  • English Version

যে আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন দুই বিজ্ঞানী

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৫৯ বার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

চিকিৎসাশাস্ত্রে ২০২৪ সালের নোবেলবিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর দুজন মার্কিন বিজ্ঞানী যৌথভাবে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেয়েছেন। তারা হলেন ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন। সোমবার (০৭ অক্টোবর) নোবেল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চলুন জেনে নিই কী আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন এই দুই বিজ্ঞানী।

নোবেল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, করোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি ‘মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার এবং পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার জন্য’ ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রুভকুনকে আজ চিকিৎসা বা ওষুধশাস্ত্রে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার ২০২৪ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছরের নোবেল পুরস্কার দুই বিজ্ঞানীকে ‘জিনের কার্যকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়’ সে সংক্রান্ত একটি মৌলিক নীতি আবিষ্কারের জন্য সম্মানিত করেছে। এই দুই বিজ্ঞানী কীভাবে বিভিন্ন কোষের বিকাশ ঘটে সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন। তারা মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেছেন। এটি একটি নতুন শ্রেণির ক্ষুদ্র আরএনএ অণু, যা জিন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের একটি সম্পূর্ণ নতুন নীতি প্রকাশ করেছে, যা মানুষসহ বহুকোষী জীবের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

দুই বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি এখন জানা গেছে যে, মানব জিনোম এক হাজারেরও বেশি মাইক্রোআরএনএর জন্য কোড করে। তাদের আশ্চর্যজনক আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা প্রকাশ করেছে। মাইক্রোআরএনএ জীব কীভাবে বিকাশ লাভ করে ও কাজ করে তার জন্য মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হচ্ছে।

এ বছরের নোবেল পুরস্কার জিন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোষে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া আবিষ্কারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। জেনেটিক তথ্য ডিএনএ থেকে ট্রান্সক্রিপশন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেসেঞ্জার আরএনএতে এবং এরপরে প্রোটিন উৎপাদনের জন্য কৌষিকতন্ত্রে প্রবাহিত হয়। সেখানে এমআরএনএগুলো ডিএনএতে সঞ্চিত জেনেটিক নির্দেশাবলী অনুসারে যাতে প্রোটিনগুলো তৈরি হয় সেভাবে রূপান্তরিত হয়। ২০ শতকের মাঝামাঝি থেকে বেশ কয়েকটি মৌলিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এই প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমাদের ক্রোমোজোমের মধ্যে সঞ্চিত তথ্যগুলোকে শরীরের সমস্ত কোষের জন্য একটি নির্দেশাবলীর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিটি কোষে একই ক্রোমোজোম থাকে, তাই প্রতিটি কোষে ঠিক একই সেট জিন এবং হুবহু একই নির্দেশাবলী থাকে। তবু, বিভিন্ন কোষের ধরন, যেমন পেশি এবং স্নায়ুকোষের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

কীভাবে এই পার্থক্য উদ্ভূত হয়? উত্তরটি রয়েছে জিন নিয়ন্ত্রণে, যা প্রতিটি কোষকে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক নির্দেশাবলী নির্বাচন করতে বাধ্য করে। এটি নিশ্চিত করে যে, প্রতিটি কোষের মধ্যে শুধু সঠিক জিনের সেট সক্রিয় রয়েছে।

আমাদের অঙ্গ ও টিস্যুগুলো বিভিন্ন ধরনের কোষ নিয়ে গঠিত। সবকটিই তাদের ডিএনএতে অভিন্ন জেনেটিক তথ্য সঞ্চিত রাখে। এই বিভিন্ন কোষ প্রোটিনের অনন্য সেট প্রকাশ করে। এটা কীভাবে সম্ভব? উত্তরটি রয়েছে জিনের ক্রিয়াকলাপের সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, যাতে প্রতিটি নির্দিষ্ট কোষের মধ্যে শুধু জিনের সঠিক সেটটিই সক্রিয় থাকে। এটি, উদাহরণস্বরূপ, পেশি কোষ, অন্ত্রের কোষ এবং বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু কোষগুলোকে তাদের বিশেষ কার্য সম্পাদনে সক্ষম করে তোলে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এছাড়া আমাদের দেহ ও পরিবেশের পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে কোৗশিক কার্যক্রমকে খাপ খাইয়ে নিতে জিনের ক্রিয়াকলাপকে অব্যাহতভাবে সূক্ষ্মভাবে সমন্বয় করতে হয়। যদি জিন নিয়ন্ত্রণে হেরফের হয়, তাহলে এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা অটোইমিউনিটির মতো গুরুতর রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অতএব, জিন কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ বোঝা বহু দশক ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম থেকে আজ স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর...